How To Make Neem Begun stir fried neem eggplant নিম বেগুন রেসিপি

How To Make Neem Begun stir fried neem leaves and eggplant Bengali teto

Neem Begun Recipe: বসন্তে রোগের প্রকোপ ঠেকাতে নিয়মিত খান নিম বেগুন

হাম ও বসন্তের মতো ছোয়াঁচে রোগের থেকে শরীরকে রক্ষা করতে বাঙালির ঘরোয়া টোটকা তেঁতো খাবার খাওয়া

চৈত্র মাসে নিম-বেগুন ছিল বাঁধা। বসন্ত রোগে প্রতিরোধে এক ঘরোয়া টোটকা হলো নিম বেগুন যা বসন্তকালে চিরকালীন বাঙালির নিত্য খাবারে থাকবেই । তা শুধু ওই নিম-বেগুনই। তাই দিয়েই একথালা ভাত খেতে পারে আমবাঙালি । বাড়িতে কাঁচা লঙ্কা থাকলে এর সাথে আর কী চাই । গরম পড়ল তো নিম বেগুন, কাঁচা আমের ঝোল, বর্ষা পড়লে সজনে ডাঁটা চচ্চড়ি, পলতার ঝোল, কচু শাকের ঘণ্ট । ঋতু বিশেষে এই সব খাবার বাঙালির রোজকার মেনুতে ঠাঁই করে নেবে স্বাস্থ্যরক্ষার তাগিদে । এমনই আরো কিছু ঘরোয়া বাঙালি খাবারের গল্প আর কথা পাবেন এইখানে

Kolkata 12/28/22 7:24 PM

কম তেল এবং মশলা দিয়ে খাঁটি বাঙালি খাবার রান্না করা কিছুটা কঠিন। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে, সবজি কিভাবে টুকরো হবে, কোন রান্নায় কোন সবজি কতটা দিতে হবে এবং তার আকার, কতটা রান্না করতে হবে আর সেইভাবে রান্না হবে যাতে সমস্ত উপাদান তাদের স্বাদ ধরে রাখে ।

এখন খাদ্যবিলাসী বাঙালি সব ধরণের ছোট বড় ঘরোয়া অনুষ্ঠানে তেঁতো দিয়ে খাবার শুরুটা একটা নিয়মে বেঁধে রেখেছে, এই পর্যন্ত । এই তেঁতোর পর মেনুতে থাকবে ঝাল, ঝোল, কোর্মা, কালিয়া ইত্যাদি পঞ্চব্যঞ্জন । তবে এই তেঁতো যেমন নিম-বেগুন বা উচ্ছে হলে পরে পঞ্চব্যঞ্জনের সোয়াদটা বেশ খোলে | দীর্ঘদিন একঘেয়ে খাবার খেলে বা জ্বর জারি হলেও এই তেতোতেই মুখের অরুচি কাটে ।

বসন্তকালে হাম ও বসন্তের মতো সমস্যা রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে অনেকেই পরামর্শ দেন তেঁতো খাবার খাওয়ার। নিম [Azadirachta indica] ও বেগুনের [Solanum melongena] এন্টিভাইরাল, এন্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিঅক্সিডেণ্ট ভূমিকার বিষয়ে আয়ুর্বেদ থেকে বর্তমান বিজ্ঞান রিসার্চ সবখানেই অনেক তথ্য ও প্রমান রয়েছে ।

রান্নার উপকরণ:

  • ১ ছোট বাটি নিম পাতা
  • ১টি ছোট বেগুন
  • ১ টেবিল চামচ তেল (সরিষার তেল)
  • ১ চিমটি হলুদ (হলুদ)
  • ১ চা চামচ লবণ

রান্না পদ্ধতি:

  • কিছু কচি নিম পাতা নিন যেগুলোর রঙ কিছুটা লালচে, ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। বেগুন তিনকোনা করে কাটুন, (প্রথমে একটি গোলাকার চাকতি তৈরি করুন তারপর প্রতি ডিস্কে চারটি কেটে নিন), এটি ভালভাবে ধুয়ে নিন এবং পর্যাপ্ত লবণ এবং হলুদ দিন, 10 মিনিটের জন্য সরিয়ে রাখুন। বেগুন ততক্ষণে নরম হয়ে যাবে। এবার তেলে প্রথমে বেগুন ৫ থেকে ৭ মিনিটের জন্য ভাজুন, নামিয়ে একপাশে সরিয়ে রাখুন। সেই প্যানে কম আঁচে নিম পাতা ভাজুন যতক্ষণ না এটি খাস্তা হয়ে যায় এবং সুগন্ধ ছাড়ে । এটি ৮ থেকে ১০ মিনিট সময় নেবে, ধৈর্য ধরুন, আপনি এটি আঁচে রেখে অন্য কাজ করতে পারেন, তবে মাঝে মাঝে নাড়া চাড়া করতে হবে যাতে পুড়ে না যায় । কুড়মুড়ে নিম পাতা ভাজা আঁচ থেকে নামিয়ে বেগুন ভাজাতে মিশিয়ে নিন । গরম ভাতের সাথে খাবারের শুরুতে পরিবেশন করুন ।
টিপস:
  • ১. নিম পাতা বেশি করে শুকিয়ে একটি ছোট কৌটাতে করে ফ্রিজে রাখতে পারেন।
  • ২. আপনি মাইক্রোওয়েভ করতে পারেন ।
  • ৩. শুকনো নিম পাতা রান্নার পাশাপাশি অন্যান্য উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করতে পারেন।
  • ৪. নিম পাতার ডালপালা ফেলে দেবেন না। জল সবুজ না হওয়া পর্যন্ত এগুলিকে সিদ্ধ করুন, চানের সময় এটি ব্যবহার করুন, এটি একটি অ্যান্টিসেপটিকের ভালো বিকল্প ।
  • ৫. নিম পাতার গুঁড়ো ভেষজ প্রসাধনী (ফেস প্যাক, বাথ সল্ট ইত্যাদি) ব্যবহার করতে পারেন ।
  • ৬. মেঝে পরিষ্কার করার সময় এটি ব্যবহার করতে পারেন, এটি আপনার ইনডোর প্ল্যান্টে ব্যবহার করতে পারেন, এমনকি আপনি এটি মশার কয়েলের পরিপূরক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন বা অষ্টগন্ধা দিয়ে প্রতিদিন সন্ধের সময় ধুনুচিতে পোড়াতে পারেন।

'ওষুধ-গাছ', 'স্বাধীন-গাছ নিম গাছের ল্যাটিন জৈব নাম- 'আজাদিরাটা ইন্ডিকা (Azadirachta indica)। পার্সীভাষা থেকে উদ্ধৃত এর মানে এই রকম আজাদ (Azad) মানে স্বাধীন! দিরাবট (dirakht) মানে গাছ, ই-হিন্দ (i-hind) ভারতবর্ষীয় । চলতি ভাষায় আমরা বলি, নিম বা মার্গোসা (Margosa)। এই গাছ মেহগনি গোত্রীয়। রোগ-অসুখ দূর করায় যার জুড়ি নেই।

পৌরাণিক কাহিনীতে "নিম', ফুলের মতোই এক 'পবিত্র' উপাচার। বনবাসের পর অযোধ্যায় ফেরা রাম-সীতাকে আপ্যায়ন করা হয় ঘরের দরজায় দরজায় রুপোর পাত্রে ফুল ও নিম ডাল দিয়ে সাজিয়ে। বুদ্ধের জাতকের গল্পে নিম গাছের উপস্থিতি প্রকৃতির ভারসাম্যের উদাহরণ হিসেবে লেখা আছে । প্রাচীন কালে দূর যাত্রায় বিশ্রাম নেওয়া হতো নিম গাছের নীচে । চরক সংহিতায় চর্মরোগ, মুত্রাশয়ের রোগ, জ্বর-জ্বালা ও আরো অনেক অসুখেই নিম-কে ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের কথা বিস্তারিত আলোচনা করা আছে ।

সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আজও এদেশের সাধারণ মানুষ নানান ঘরোয়া প্রক্রিয়ায় নানানভাবে রোগের নিরাময়ে বা সুস্থতা রক্ষায় নিমপাতা, নিমডাল, নিম-ছাল, নিম বীজ, নিম ফুল সব কিছুই ব্যবহার করেন প্রায় বিনা খরচেই, যত্রতত্র তার ডালি নিয়ে উপস্থিত মানুষের কল্যাণে | ১৯৫৮ সালে নাইজেরিয়াতে এক বিপর্যয়কারী পঙ্গপালের আক্রমণ ঘটেছিলো – যা ছারখার করে দেয় গাছ-পালা, শসা-উদ্ভিদ; অথচ সুরক্ষিত ছিলো সব নিমগাছ। দেশে দেশে লৌকিক সমাজে নিম ভাই শুধু উপকারী নয় এক পবিত্র গাছ হিসেবে আদৃত। রাজস্থানের এক আদিবাসী সম্প্রদায় নিম গাছকে পুজো করে "নিম-নারায়ণ' হিসেবে। সবরমতী আশ্রমে ও সেবাগ্রামে গান্ধীজির প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হতো নিমগাছের নীচে। দক্ষিণভারতের অনেক মন্দিরের চত্বরেই রাখা হয় নিম-গাছ। পৌরাণিক সংস্কারে নিম গাছ কাটাকে বালিকা কন্যাকে হত্যার সমান কাজ বলা হয়েছে। মুসলিম সমাজে এই গাছকে বলা হয়েছে 'সাজার-এ মোবারক' বা পবিত্র গাছ। তবে, গত সত্তর বছর ধরে ভারতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেও নিম-গাছ নিয়ে গবেষণা বা পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে।

নিমগাছের বিভিন্ন অংশেই নানান গুরুত্বপূর্ণ ঔষধজাতীয় বা অন্য রাসায়নিক যৌগ প্রচুর পরিমাণে আছে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বা কার্যকরী হলো, নিমবীজের আজাদিরাকটিন' (Azadirachtin) নামক প্রাকৃতিক রাসায়নিক যৌগটি | গ্রামীণ-জ্ঞান হিসেবে অতি প্রাচীন পদ্ধতিতে বীজকে পেষাই করা, সারা রাত ভেজানো, ছাল ছাড়ানো, সবই হয়ে এসেছে ।

নিম তেলের থেকে উৎপন্ন একটি ছত্রাক নাশকের পেটেন্ট বিদেশী সংস্থাগুলির হস্তগত হয় ১৯৯৪ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর। এর বিরুদ্ধে লড়লেন ভারতীয় বিজ্ঞানী ও সমাজকর্মী ডা: বন্দনা শিবা, আরো দুই মহিলা নেত্রী, বেলজিয়ামের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মন্ত্রী, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের গ্রীণ গ্রুপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাগদা অ্যালেডেট এবং জার্মানির "অরগ্যানিক এগ্রিকালচারাল মুভমেন্টস্”-এর প্রেসিডেন্ট লিন্ডা ব্যালার্ডের সঙ্গে যৌথভাবে প্রায় এগারো বছর ধরে । আলোচিত নিম-যুদ্ধে' হাত মিলিয়ে ছিলেন ব্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিশেষজ্ঞ, বেনারস হিন্দু বিদ্যালয়ের নিম-বিশেষজ্ঞ-সহ আরো অনেকেই নানান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় | এই ঘটনায় নিম তেল নিয়ে বহুজাতিক সংস্থাগুগি ব্যবসায়িক উচ্চাকাঙ্ক্ষা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। ঐ পেটেন্ট অফিসে পঞ্চাশটি কোম্পানির দাখিল করা নিম-প্রোডাক্টের পেটেন্ট আবেদন পত্রের সত্ত্বটি-ই বাতিল হয়েছে।

বিশ্ব জোড়া বাণিজ্যিক পুনর্গঠনে, বাস্তবত আমরা ভারতীয়রা হয়ে উঠছি সস্তা শ্রম, সস্তা মেধা, জৈব-অজৈব, কাঁচামালের সস্তা ও ভালো জোগানদার। যেমন, "নিমগাছ" নিয়ে নিঃশব্দ চক্রান্ত চলছে বেশ কয়েকবছর ধরে। ভারতীয় প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক ও কয়েক হাজার বছর ধরে লৌকিক বা গ্রামীণ জীবনে বংশপরম্পরায় রোগ-নিরাময় রোগ-প্রতিষেধ বা স্বাস্থ্য রক্ষায় নানানভাবে ব্যবহৃত এই গাছের ডাল, পাতা, ফল, বীজ, ছাল এখন লোভনীয় কাচামাল হিসেবে নজরে পড়েছে উন্নত বিশ্বের।

দয়া করে কেউ নিম গাছ কাটতে দেবেন না। বাস্তু অনুসারে নিম গাছকে একটি শুভ বৃক্ষ হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং দেবী শক্তির গাছ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি অথর্ব বেদের বৈদ্যকল্পে উল্লেখ করা হয়েছে (36.6.27 শ্লোক)

"Yo Vah sarvatobhadrah vasantasya bhdjayate hanah

hrdayabhumimjdtavedasam ayaksmdya tvd samsrjdmi Prajdbhyah"

सर्ब्बतःभद्र निम्ब अरिष्टश्च, सर्बोतोभद्राणि मुखानि यस्व,

निम्बति सेचोते, रसेनो स्वस्थङग ;

र्रिस्तोः शुभेति तद अशेषेनो ग्यपयति दुरत्

तस्व रसोः र्हिदोयोभुमे, यतोबेदोसों पित्तोबोत अग्निं

तस्व दह शन्तिकृत, अयख्ययो ख्हयोरोग्यो संग्जातो

कृमिसमुद्भुतय त्बा संग्सृजामि प्रजाभ्य

এই সূক্তের অর্থ হল "তুমি সর্বতোভদ্র, 'সর্ব' অর্থ সমস্ত, এবং 'ভদ্র' অর্থ শুভ, নিম্বা ও অরিষ্ট, সর্বত্র বিস্তৃত, তোমার রস গ্রহণ করা যায়। তুমি দূর থেকে শুদ্ধ ও রক্ষা করতে সক্ষম তাই নাম অরিস্তা। রোগ ও কৃমি থেকে রক্ষা করে, কৃমি যা আমাদের স্বাস্থ্যহানি করে।

নবকলেবর শব্দটি সংস্কৃত শব্দ নব বা নতুন এবং কলেবর বা শরীর থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার আক্ষরিক অর্থ নতুন দেহ। এটি একটি প্রাচীন রীতি যা জগন্নাথ মন্দিরের ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা এবং সুদর্শনের মূর্তিগুলিকে একটি নতুন মূর্তি দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়। যে বছরে হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে আষাঢ়ের দুই মাস (আধিকা মাস) থাকে সেটি এই অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য শুভ। এটি সাধারণত প্রতি ৮, ১২, থেকে ১৯ বছরে ঘটে। দেবতাদের তৈরি করা হয় বিশেষ ধরনের নিম কাঠ থেকে যা দারুব্রহ্ম নামে পরিচিত। অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয় চৈত্র মাসে। শেষ অনুষ্ঠান হয়েছিল ২০১৫ সালে। এই অনুষ্ঠানের জন্যে নিম গাছ কে রক্ষা বা সংরক্ষণ করার একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা হয় বছরের পর বছর ধরে ।

এই নিয়মগুলি তৈরী করার উদ্দেশ্য গাছ সংরক্ষণ করা ও পরিবেশকে রক্ষা করা, তাই নয় কি !

আরও পড়ুন: