গার্সী ব্রত গাড়ুর ডাল - Garsi brata Garur Dal

গার্সী ব্রত গাড়ুর ডাল - Garsi brata Garur Dal - biswabangalee

বাংলার ব্রত অনুষ্ঠান - গার্সী ব্রত গাড়ুর ডাল

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গারুর ডাল কিভাবে খাওয়া হয়

কোচবিহার জেলার একটি অন্যতম মাইগ্রেটেড ব্রত হল গার্সী ব্রত। ‘গার্শি’ ‘গাইস্থ্য' শব্দের অপভ্রংশ । এই ব্রত অনুষ্ঠানটিও মূলত পূর্ববঙ্গীয়দের মধ্যে প্রচলিত বেশি। আশ্বিন সংক্রান্তির দিন এই ব্রত পালনের প্রশস্ত সময়। গার্শিব্রত সাধারণত লক্ষ্মীর আরাধনা। ব্রতের কথার সঙ্গে লক্ষ্মীর পূজা প্রচলনও বর্তমান। খেসারির ডাল, কলা, নারিকেল, তালের শাঁস, কুমড়া, উড়ি চাল প্রভৃতি হলো পূজার উপকরণ। পূজার দিন চাল আর মাছ ধরে খাওয়া নিষেধ। এই রকম না করলে লক্ষ্মী ঘরে প্রবেশ করে বিশ্বাস। এই দিন সন্ধ্যার সময় বাড়ীর চতুর্দিকে প্রদীপ জ্বালানো হয় । বিবাহিত মহিলারাই সাধারণত এই ব্রত পালন করেন এবং ব্রতের দিন তাঁরা নিরামিষ খাবার খান। পূর্ববঙ্গীয় ঢাকা অঞ্চলের হিন্দুরা এদিনটি বিভিন্ন লোকাচারে গারু সংক্রান্তি হিসেবে পালন করেন। এদিন বিশেষ করে শালুকের গুড়ি, কাঁচা তেঁতুল, কাঁচা হলুদ ইত্যাদি দিয়ে তৈরী ডাল ও তেতো খাওয়ার নিয়ম আছে।

রাতভর একবালতি জল, তেঁতুল, কাঁচা হলুদ, শুকনো পাটপাতা, সর্ষে, কলার পাতার তৈরী কাজল উঠোনে বা ঘরের চালের মাথায় কুয়াশায় রেখে দেওয়া হয়। এবার পর দিন ঘুম থেকে উঠে একটি বাঁশের-চালুনের উপর মানকচুর পাত বিছিয়ে একছড়া পাকাকলা, একবাটি তেল, কাঁচাহলুদ, কাঁচাতেঁতুল, তালের আটির শাঁস, আয়না-চিরুণী ইত্যাদি রেখে পাটকাটি জ্বালিয়ে আগুন পোয়াতে থাকেন। আগুনে কাঁচা তেঁতুল পুড়িয়ে ঠোটে মাখে ও তেল মাখেন, আয়নায় মুখ দেখেন, চুল আঁচড়ান। ঐ তেঁতুল দাঁতে মেখে মুখ ধোয়া এবং কাঁচা হলুদ গায়ে মেখে স্নান করার নিয়ম আছে। মূলত খোস-পাচরা জাতীয় রোগ নিরাময়ই এই ব্রতের মূল উদ্দেশ্য।

এই ঘরোয়া টোটকার উদ্দেশ্যে অনেকে পাট কাঠির মাথায় আগুন নিয়ে সিগারেটের মত ধোঁয়া ছাড়ে। এতে সর্দি কাশি নিরাময় হয়। যাঁদের জমি আছে তাঁরা ক্ষেতের সামনে ভোরবেলা তেল-সিঁদুর ও পাঁচটি আমের পল্লব দিয়ে ঘট বসিয়ে পূজা করেন।

ঢাকা জেলায় বসবাসকারী বারুজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যে গার্সী ব্রত উপলক্ষ্যে গারু সংক্রান্তির দিন তেঁতুল পুড়ে পাট কাঠির মাথায় আগুন দিয়ে বাড়ির চারদিকে ঘোরানোর নিয়ম আছে। গার্সী ব্রতে এই সম্প্রদায়ের মানুষ ধানকে সাধ খাওয়ান যাকে পূর্ববঙ্গীয় ভাষায় বলা হয় "ধানকে হোন্দা খাওয়ানো"। এসময় তাঁরা একটি ছড়াও বলেন।

"আশ্বিনে রেখে কার্তিকে খায়, যে বর মাঙে সেই বর পায়"

আবার "পাকাধানের গান" -এর লেখিকা সাবিত্রী রায় মলুর দুঃখে লিখেছেন "মলু গাড়ুর ডাল রান্নার জন্য শালুক তুলতে এসেছে ধান ক্ষেতে। কিন্তু শাপলা তোলা ভুলে গিয়ে এক হাটু ক্ষেতের জলে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে ধান গাছের সাধ খাওয়া দেখে । ভাবে, বড় হয়ে এমনি একখানা ধানক্ষেতের মালিক যদি হতে পারে সে, সেও অমনি করে কাঁচা হলুদবাটা দিয়ে সাধ খাওয়াবে ।"



গাড়ুর ডাল রান্না

এতদঞ্চলে গার্সী ব্রতে আর একটি লোকাচারও দেখা যায়। আশ্বিন সংক্রান্তির দিন বাড়ির উঠোনে একটি কুলগাছ গেড়ে একটি প্রতীকধর্মী পুকুর কাটা হয়। পুকুরের ধারে বসে থাকা একটি শিশুর কোলে বৃদ্ধার মূর্তি থাকে। একটি বড় পাত্রে আট রকমের সব্জী অড়হর বা খেসারীর ডাল সম্ভার না দিয়ে বানিয়ে দিতে হবে এবং ফুল, বেল পাতা, ধূপ-ধুনা জ্বালিয়ে দিয়ে ব্রত কথা শুরু করতে হবে। এইরূপ ডালকে বলা হয় গারুর ডাল। এই ডালের মূল সব্জীর উপকরণ হল— সাপলার শেকড়, কাঁচা তেঁতুল, কাঁচা হলুদ, সাদা পুরনো চালকুমড়ো, মিষ্টি কুমড়ো, শোলাকচু, গাটি কচু, মুখি কচু,মুখি আলু, কলমি শাক প্রভৃতি। এই ডাল আশ্বিন সংক্রান্তিতে রান্না করে পরের দিন খাওয়ার রেওয়াজ আছে। পূর্ববঙ্গীয় ভাষায় এখানে একটি ছড়াও প্রচলিত আছে। যেমন – 'আশ্বিনে রাইন্দা যে কার্তিকে খায় সে জন ভাইগ্যবতী হয়।"

দুর্গাপূজো সকলের সেরা, শুধু পূজা নয়, সে আজ উৎসব - দূর্গোৎসব, সে বড়লোকি ব্যাপার | এদিকে সেদিকে জনজাতির কিছু খুচরো পরবও আছেন । দুর্গাপূজো দেরিতে কাত্তিক মাসে । খুচরোরা আগে এসে যাচ্ছেন ।

আশ্বিন সংক্রান্তি দিন | মণ্ডপে দুর্গাপ্রতিমা যখন রং-চিত্রিত হচ্ছে, পাকা ধানবনের মধ্যেও এক ধরনের পূজোই - ধানবনকে সাধ-খাওয়ানো হবে | এ পূজোর পুরুত বলতে হবে শিশুদেরকেই । "আশ্বিন যায় কাত্তিক আসে, মা লক্ষ্মী গর্ভে বসে। সাধ খাও মা সাধ খাও" - এই হল সরল মন্তর । মন্ত্র বলে শিশুরা ক্ষেতের ধারে এক ফেরো দুধ ঢেলে দেবে । ধানের ভেতরের দুধ, শস্যের যা আদি অবস্থা সেটা যেন খুব ভাল হয় এই কামনা । দুধ দিয়ে তারপর ৰাতাসা ছড়িয়ে দেবে, অর্থাৎ চালের স্বাদ যেন মিষ্টিও হয়। শিশুরা চাষবাসও করে - অতএৰ ক্ষেত হলো তার মেয়ে । গর্ভবতী মেয়েকে আপনজনেরা সাধ খাওয়ায় - ক্ষেত্কে মা ডেকে শিশুরা সাধ খাওয়াচ্ছে, দেখুন ।


Read more articles Index

আবার সেই সংক্রান্তি রাতটা ভাল করে না পোহাতেই ভিন্ন এক পরব - গারসি। পোহাতি-তারা আকাশে | বাদূরের ঝাক বাসায় ফিরছে । বাড়ির বড়োরা উঠে ডাকাডাকি করছেন - ওঠো সব। ওঠ রে, গারসি করবি নে?

সবাই উঠেছে -- সধবা-বিধবা, ছেলে-বুড়ো বলে বাছাৰাছি নেই | গারসি করতে এ-বাড়ি ও-বাড়ি থেকে একটা জায়গায় এসে সব জমল।

ছড়া কেটে পুকুরঘাটে দৌড়ল ঘটি নিয়ে। রীতকর্মে জলটা শুধু টাটকা লাগে, বাকি সমস্ত বাসি। রাত পোহালেই যে দিন, তার মধ্যে উনানে আগুন দেওয়া যাবে না, চিড়ে মুড়ি বাসি-পান্ত খেয়ে সব থাকবে । এর উপরে গ্রাম বলে এরই মধ্যে বেশ শীত-শীত ভাব । জল নিয়ে ফিরেছে সব । হলুদ-বাটা সর্ষে-বাটা মেথি-বাটা তেল সব বাটিতে-বাটিতে । কুলগাছের নতুন পাতা একটা বাটিতে বেটে রেখেছে । কাজলপাতায়ে কাজল পাড়ানো। মুঠোখানেক কাঁচাতেতুল। থরে থরে সমস্ত কুলোয়ে সাজিয়ে রাখল ।

পাটকাঠিতে আগুন ধরিয়ে দিল | ঘটির জলে হাত ধুয়ে নিয়ে আগুনে হাত-পা সেঁকছে । পাটকাঠির আগুনে কাঁচা তেতুল পোড়াল - খোলার নিচে তেঁতুল ক্ষীরের মতন হয়ে গেছে । এবারে তেলেহলুদ-বাটায় মিশিয়ে রগড়ে রগড়ে গায়ে মাখে, মেথি তেতুলপোড়া ইত্যাদি । ঘি-ও মাখে ঈষৎ | মাথার চুলে কিন্ত ঘি মাখে না, খবরদার | চুল সাদা হয়ে যাবে ।

পাটকাঠির এক-এক টুকরো ভেঙে সকলকে দিচ্ছে - এক মুখে ভার আগুন ফকফক করে টানছে । খেতে হয় এই রকম, এটাই গার্শী বিধি ।

ভোর হতেই বৈরাগীর গলা | পয়লা কার্তিক আজ । বৈশাখ আর কার্তিক বছরের মধ্য এই দুটো মাস প্রভাতী গাইতে হয়। গাইছেন আজ আগমনী-গান । ক'দিন পরে বিসর্জনী, মানুষ কাঁদাবেন বিসর্জন গেয়ে গেয়ে । দুর্গোৎসব চুকেবুকে যাওয়ার পর হরিকথা, কৃষ্ণকথা - বরাবরকার যে সমস্ত গান ।



বিক্রমপুরে এই ব্রতের নাম ‘গাড়ুব্রত’ | গারু - গাবর শব্দ থেকে উদ্ভূত - কর্ণধার - পৌন্ড্রজনগোষ্ঠীর সামাজিক বৃত্তি বা পেশা থেকে পদবীর উৎপত্তি |

পেশার দৃষ্টান্ত আছে "কবিকঙ্কন চন্ডী" তে ——

"অভিশাপ দিয়া ওজা চলিলা নিলয় ।
ধনপতি যাত্রা কৈল গোধূলি সময় ॥
প্রভাতে উঠিয়া সাধু ভাবি মনে মন।
গাবর-পাড়ায় যায়্যা দিলো দরশন ॥"

অথবা

"বাহ বাহ বলিয়া ডাকছে সদাগর ।
হাতে দণ্ড কেরুয়ালে বসিল গাবর ॥"

পূর্ব মৈমনসিংহে মাটি দিয়ে এদিনে নাক-কান কাটা একটি অলক্ষ্মীর মূর্তি গড়া হয়। ব্রতকথা পালন করে লক্ষ্মীকে বরন করে ঘরে তোলা হয় । এদিনে সকলে চিনার চালের ভাত খান। (কাউন বা শ্যামা নয় )

যশোরে ‘গার্শি” হয়ে থাকে কার্তিক মাসে সংক্রান্তির শেষ রাত্রে পাটকাটির আগুন জ্বেলে সকলে তার চারিপাশে বসেন এবং ঠোটে ঘি, তেঁতুল প্রভৃতি দিয়ে যে যার কাজে যান।

আশ্বিন সংক্রান্তি - ফরিদপুর

প্রতি মাসের শেষ দিন প্রকৃত প্রস্তাবে পরবর্তী মাসের সংক্রান্তি, কিন্তু চলতি ভাষায় তাকে আগের মাসেরই সংক্রান্তি বলা হয়। এই হিসাবে আশ্বিন মাসের শেষ দিনকে আশ্বিন সংক্রান্তি বলে। আশ্বিন সংক্রান্তিতে ফরিদপুরে সমস্ত হিন্দু গৃহে ধর্মানুষ্ঠান করা হতো । একেই “গার্সী” বলে। এই দিন প্রকৃত পক্ষে প্রীতিপ্রদ শরৎ ঋতুর অবসান এবং হেমন্তের প্রারম্ভ । হিন্দু জ্যোতিষের মতে বছর গণনার সময়ে এই দিন-রাত্রি সমান ছিল।

কার্তিক মাসে শিশির পরা শুরু হয়, এই খতু পরিবর্তন নানা রোগের আকর। কার্তিকের মত অস্বাস্থ্যকর মাস আর নাই। লোকে কার্তিক মাসকে "যমের দক্ষিণ দুয়ার" বলে থাকে। এই ভীষণ কালের নানা রকম অনিষ্টকর ফল থেকে রক্ষা পাবার জন্যে আশ্বিন সংক্রান্তির রাত্রিতে প্রতি ঘরে ভগবানের নাম কীর্তন হতো । অনেক গ্রামে ঘরে ঘরে হরিনাম করিয়া সম্পূর্ণ রাত্রি জেগে থাকতো; নানা ঘরে মহাসঙ্কীর্তন হতো; অনেকে নিকটবর্তী কোন জায়গায় সমবেত হয়ে কীর্তন করে রাত কাটিয়ে দিত । পরদিন সকালে মশা, মাছি প্রভৃতি দূর করিবার জন্যে ছেলেরা লাঠি দিয়ে সব বাড়ির বেড়া পিটাতো, চারিদিকে ঘুরে ঘুরে "ওহো ওহো" শব্দে আনন্দ প্রকাশ করে, পাট কাঠির ধোঁয়া খেত আর এবং সিদ্ধ কাঁচা তেতুল গায়ে মাখতো । এদিনে সকলে চিনার চালের ভাত খান। কার্তিক মাসে প্রতিদিন ঘরে ঘরে আকাশ প্রদীপ এবং দেব মন্দিরে দীপ দানের প্রথা ছিল । আগে আশ্বিন সংক্রান্তি থেকে গ্রামের মেয়েদের সারা কার্তিক মাস ধরে যমপুকুর ব্রত শুরু হতো ।



বীরভূমে গাড়সে ষষ্টি বা গার্সে ব্রত বা নল সংক্রান্তি : বীরভূমে আশ্বিন সংক্রান্তিতে মেয়েরা ধানমাঠে গিয়ে পুজা করে। রেকাবিতে আতপচাল, কাজল ইত্যাদি রেখে খড়ের দড়িতে (বড়ে) আগুন ধরিয়ে পুজা করার পর জমিতে একঘটি জল ঢেলে দেয়। এদিন ধানক্ষেতে একটি শর অথবা নলকাঠি পোতার নিয়ম। ওল, মানকচু, রাইসরিষা, আউশের আলোচাল, ঘি, মধু ইত্যাদি উপকরণে পুর্ণগর্ভা ধানকে সাধ দেয়। মেদিনীপুর তোলায় কোঁড়া উপজাতিদের মধ্যেও এই দিন উৎসব পালন করা হয় ।

রাঢ়ের সংস্কৃতি ও ধর্মঠাকুর গুমা দেওয়া :

কামিনীকুমার রায় লিখেছেন - গুমা দেওয়া পর্বের কথা। সেটি এই আমন ধানের "সাধভক্ষণ বা দোহদ-দান" সংস্কার বিশেষ। ধান গাছের গর্ভে শীষের উদ্গম হইলে (বেরোলে) আশ্বিন সংক্রান্তিতে কৃষক গৃহস্থরা গন্ধাদি দ্বারা ধান্যলক্ষ্মীকে অভিনন্দিত করে। সেদিন তাহারা আমের পাতায় সুগন্ধি মশলা "তৈলপক্ব মেথি" - ইত্যাদি (মেথি বীজ তেলে নিবু আঁচে ভেজে) মাখিয়ে প্যাকাটির (পাটকাঠি) মাথায় করিয়া ধানের ক্ষেতে গুঁজে দিয়ে আসে এবং ডাক (ডাক লক্ষী, ধান্য দেবতা) দিয়ে বলে" -

"আশ্বিন যায় কার্তিক আসে সকল শস্যের গর্ভ বসে
রামের হাতে ‘গুমা’ ধান হইস তিন দুনা"

বড়ি নবান্নের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, বড়ির প্রধান মালমসলা হল বিউলি কড়াই ও চালকুমড়ো। এ দু'টির মধ্যে প্রথমটির উৎপাদনে কম-বেশির মাধ্যমে কৃষক তার বৎসরের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বিশেষভাবে জানতে পারে। বিউলিকে আলোচ্য অঞ্চলে বিরি বলে। বর্ষার প্রারম্ভেই ডাঙ্গায় লাঙ্গল দিয়ে বিরি ছড়িয়ে দেয়। পাকা ধান আমদানী হওয়ার আগেই বিরি আমদানী হয়ে যায়। অভিজ্ঞ কৃষক একটি গাছের চার পাঁচটি শুঁটির ভিতরকার দানার গড় নির্ণয় করে। বিঘা প্রতি কত মন করে ধান হবে সে বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণী করতে পারেন।

ডাক সংক্রান্তির দিন ধান গাছের রোগনাশক ওষধিগুলির সঙ্গে বিরিকেও পলাশ পাতায় পোঁটলা বেঁধে ধানের ক্ষেতে ফেলে দেয়। এতে ধানগাছ নিরোগ হয় ও বিরির মত ফলন হয় বলে ধারণা।

ভোরবেলা কোনো নদী বা পুকুরে স্নান করে সেখান থেকে একটি পাত্র ভরে জল নিয়ে আসেন। সেই জলকে বলা হয়, "ডাকজল"। প্রত্যেকটি কৃষক পরিবারের প্রত্যেকে নিমপাতা ও তালশাঁস খাওয়ার পর ঐ জল পান করেন। তাঁদের বিশ্বাস, এইটিই হলো ডাক পুরুষের আদেশ বা বাণী; এর দ্বারা সমস্ত বৎসর তাঁদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং এই খাদ্য ও পানীয়ের গুণ, সারা শরীরের মধ্যে ক্রিয়াশীল থাকবে।

গর্ভনা সংক্রান্তি : আশ্বিন সংক্রান্তিকে মেদিনীপুরে গর্ভনা সংক্রান্তি বলে:

আগে শরকাঠি বা নল পোতার কথা বলেছি। ঐ কাঠির মাথায় নাড়ু, হলুদ মাখানো কাপড়, পান ও মানপাতা বেঁধে একটি ধানমাঠে, একটি সার-গাদায় এবং আর একটি ঘরের চালে দেওয়া হয়। শ্রীযুক্ত চিন্তাহরণ চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেন - "নানাস্থানে আশ্বিনের সংক্রান্তিতে গার্সী, গারুই বা গারু ব্রত অনুষ্ঠিত হয়। অনেক স্থানে ইহা ধানগাছকে সাধ খাওয়ানো উৎসব। আশ্বিন সংক্রান্তিকে মেদিনীপুরে গর্ভিনী সংক্রান্তি বলে। চাষীরা প্রত্যূষে কাঁচা হলুদ বাটা, সরিষার তেলের সহিত মিশাইয়া ধানের ক্ষেত্রে ছিটাইয়া দিয়া বলে "ধান-রে সাধ খা, পাকা ফুল্যা ঘরে যা"। যাহাদের চাষবাস নাই এমন গৃহস্থের গৃহিণীরাও ব্রত পালন করিয়া থাকেন। ঘরদুয়ার পরিষ্কার করেন, লক্ষ্মীর পূজা করান, ছড়া আবৃত্তি করিয়া মশামাছি পোকামাকড় তাড়াইয়া দেন এবং চাষের কোনো জিনিষ ভোজন করেন না। হালের অর্জন, জালের মাছ এইদিনে তাহাদের পক্ষে নিষিদ্ধ" ।



কুলকুলুতি ব্রত - বাপ, শ্বশুর ও মামার বংশ রক্ষার প্রয়োজনেই মেয়েরা এই ব্রত পালন করে এসেছে । আশ্বিন সংক্রান্তি থেকে কার্তিক সংক্রান্তি পর্যন্ত নিত্য তুলসীতলায় একটি করে মাটির প্রদীপ জ্বেলে ৭টি কুলপাতা ও ৭টি প্যাটারী ফুল দিয়ে এই ছড়া পাঠে পূজা করা হত।

তোমার পায়ে দিচ্ছি বাতি।
বাপ মা আর শ্বশুর কুল,
অক্ষয় অমর হোক এ তিন কুল।

আকাশপ্রদীপ - বাঁশ ইত্যাদি মাথায় দেবতাদের উদ্দেশে আশ্বিন সংক্রান্তি থেকে কার্তিক মাসে প্রতি সন্ধ্যায় আকাশ বা বিষ্ণু মন্দিরে যে প্রদীপ দেওয়া হয় ।

রাঢ় বাংলার গৃহপালিত পশু থেকে শুরু করে ঘরের সকলের মুখ ও সমৃদ্ধির জন্ম এই ব্রত উদযাপন করেন বঙ্গ মেয়েরা | বাঙলার বিভিন্ন জাত ও বর্ণের লোক বিভিন্ন ভাবে এই ব্রত উদযাপন করেন আশ্বিন সংক্রান্তি দিবসে । এই ব্রত উদযাপিত হয় সূর্য ওঠার প্রাক-মুহূর্তে । আমরা জানি যে এই ব্রতের সঙ্গে পাটকাটির বিশেষ একটি সম্পর্ক আছে । কোন কোন জায়গায় ছোট ছোট ছেলে ও মেয়েরা গোল হয়ে বসে পাটকাটির আগুনে গা গরম করে। কোন কোন জায়গায় ওরা পাটকাটির আগুন জ্বালিয়ে ছড়া আওড়ায় আর গ্রাম প্রদক্ষিণ করে । কোথাও কোথাও ওরা কুলো উল্টো করে ধরে (প্যাকাটি) পাটকাটি দিয়ে কুলো বাজায় কাসির মত করে ।

হুকা হুকি খেলা পাট কাঠিতে আগুন দিয়ে ছুড়ে দেওয়া, - আশ্বিন সংক্রান্তির সন্ধ্যায় এই মিছিলের ভয়ে মশা, মাছি, কীট, পতঙ্গাদি পালিয়ে যায় আগুনের হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে । শীতে কীটপতঙ্গ নানা অসুবিধার সৃষ্টি করে। মিছিল করে কুলা-বাদন ও আগুনের এই মশাল যাত্রাকে কীটপতঙ্গ মারার অভিযান বললে বোধহয় খুব একটা ভূল করা হয় না।



গাড়শী আশ্বিন সংক্রান্তি লক্ষ্মী পূজা বাংলার কোনো কোনো জায়গায় লক্ষ্মীর সরা ভেঙে ফেলে অলক্ষ্মীকে বরণ করা হয় । কোনও কোনও জায়গায় লক্ষ্মীর ব্রতকথা পাঠ করা হয়। এ পাঠের সময় ঘরের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবিষয় পড়তে বলা হয়। কারণ এ সময়ে পড়াশোনা করলে ছেলেমেয়েরা নাকি তীক্ষধী হয়ে ওঠে । গাড়শী ব্রতের প্রসাদ ছেলেদের খেতে দেওয়া হয় না, কারণ লোক-বিশ্বাস, এ প্রসাদ খেলে তারা অনুভূতিহীন হয়ে যায়। কোনও কোনও জায়গায় গাড়শীব্রতের সঙ্গে মৃত শাশুড়ীর পুজাও করা হয়ে থাকে ৷

নদীয়া জেলায় সংক্রান্তির পূর্বদিন সকলে নিজ-নিজ পছন্দের জিনিসকে 'জাগিয়ে' রাখেন। কোনও দ্রব্যে হাত দিয়ে বলেন-

"জাগ জাগ জাগ
যে কর্মে লাগাই তোকে সেই কর্মে লাগ"

ধলভূম এবং ঝারগ্রামের কোন কোন অঞ্চলে আশ্বিন-সংক্রান্তি বা ডাক-সংক্রান্তি হচ্ছে ঝাঁপান উৎসবের তিথি। মল্লভূমের মনসা পূজার আরম্ভ হয় দশহরার দিন এবং সমাপ্তি হয় নলডাকা (আশ্বিন সংক্রান্তি) সংক্রান্তির দিন |



লোক-উৎসব আচার অনুষ্ঠানমূলক অথবা ঋতুমূলক যা-ই হোক না কেন তাদের মধ্যে কৃষিভাবনা তথা উর্বরতাবাদ প্রবলমাত্রায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আশ্বিন-সংক্রান্তি; যার আঞ্চলিক নাম - ডাকসংক্রান্তি । এদিন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম প্রভৃতি দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলায় ঝাপানপরব হয়। ডাক সংক্রান্তি উপলক্ষে লোক-ভাবনা অনুসারে গর্ভবতী ধানের চারাকে "সাধভক্ষণ" করানো হয়। সাধ খাওয়ানোর প্রথা হল - এদিন সকালে ধানক্ষেতে এবং বাড়ি পিছনে গোবরগাদায় শরকাঠি পুঁতে দিতে হয়। তাতে হলুদ, ওল, শালুক ডাঁটা ইত্যাদি মাঙ্গলিক দ্রব্য দেওয়া হয়। ছড়া কেটে গায়ের লোকজন বলেন -

"এতে আছে শুকুতা
ধান হবে গজ-মুকৃতা।
এতে আছে পুরানো বড়,
মবাই করবে কড়্কড়।।" (ইত্যাদি)

আগের দিন (আশ্বিন-সংক্রান্তি) কৃষক রমণীরা নতুন আউশ চালের গুড়ার সঙ্গে নারিকেল ও গুড় দিয়ে পিঠে তৈরি করে পরদিন আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করে আনন্দ করেন। ডাক সংক্রান্তির দিনে সমস্ত প্রকার কৃষি কাজ বন্ধ থাকে। অনেকেই "শালুক" খেয়ে থাকেন।

আবার বীরভূম অঞ্চলে কার্তিক মাসের সংক্রান্তিকে 'ডাক-সংক্রান্তি' বলে। এদিন স্থানীয় অধিবাসীরা ধানগাছের কাছে গিয়ে বলেন——ধান ফুলো, ধান ফুলো—' ইত্যাদি। বাঁকুড়ায় কার্তিক সংক্রান্তিকে 'মাথান ষষ্ঠী' ও বলে।



সাঁওতাল - জিহুড় : বঙ্গের আদি পুরুষ মানভূমের জনগোষ্ঠীর কুড়মি জাতির মহিলাদের দ্বারা আশ্বিন মাসে মহা ধুমধাম করে পালন হয় 'জিতা পরব'। দেখতে দেখতে চলে আসে আশ্বিন মাসের শেষ দিন - সংক্রান্তি। তামাম কৃষিজীবী কুড়মি জনগোষ্ঠী এই দিনটিকে পালন করে "জিহুড়" দিন হিসাবে। 'জিউ' অর্থ হল 'বাঁচা' আর 'মানুষ' অর্থে 'হড়' । মানুষের বেঁচে থাকা বা দীর্ঘ জীবনলাভ অর্থে 'জিহুড়' শব্দটি বলা যেতেই পারে। লোকবিশ্বাস, এই দিন থেকেই লক্ষ্মী তার আগমনবার্তা ঘোষণা করে চাষিদের উদ্দেশ্যে। আশ্বিনের শেষে স্বাভাবিক নিয়মেই ধানক্ষেতের প্রতিটি ধানগাছের থোড় এসেছে। পেটে ধানের শিস্। কিছুদিনের মধ্যেই এই ধানের শিস্ ধানগাছের পেট চিরে বের হবে। মাঠের পর মাঠ ভরে উঠবে পাকা ধানে তারই আহ্বান যেন শুনতে পায় চাষিরা। এজন্য চাষিরা এই দিনটাকে ডাক দিন বলে মনে করে। এদিন ব্যস্ততা বেড়ে যায় চাষি পরিবারগুলিতে।

চাষিরা নিজেদের খামার পরিষ্কার করে। সব জঞ্জাল পরিষ্কার করে, জল ঢেলে, লাঙল চালিয়ে কাদা করার পর হাত দিয়ে সুন্দর ভাবে সমতল করে 'খামার পইল্যায়', একে বলে 'খামার বাঁধা'। 'খামার পইল্যা' হয়ে গেলে গৃহকর্ত্রী স্নান করে ভিজে কাপড়েই এসে সদ্য কর্দমাক্ত খামারের মাঝখানে তেল - সিন্দুর-গুঁড়ি মাখা ছোট মাটির ভাঁড় বসিয়ে দেয়। তার সঙ্গে দেয়, একটি ভাঙ্গা কুলা, একটি ঠেটা ঝাঁটা, একটি ভেলা গাছের ডাল। কেউ আবার এর সঙ্গে দেয় গাঁজার পুঁটলি ও কল্কে। বিশ্বাস, এর ফলে দূর হবে যাবে অলক্ষ্মী-খামারে লক্ষ্মীর আসন পাকা হবে। আর আশ্বিন পেরিয়ে কার্তিক মাসের 'বাঁদনা' পরব'। কৃষিকাজের সহায়ক গবাদি পশু গরু-কাড়া সহ কৃষি যন্ত্রপাতির বন্দনা' (Thank Giving) একমাত্র কুড়মিরাই ভাবতে পারে। যাদের শ্রমে ও কুশলতাই সবার মুখে অন্ন জোটে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো আবশ্যক।



বাঁকুড়৷ জেলায় দেবীপূজা - রও বেশ প্রচলন আছে। রামপুর, শালতোড়া, মালিয়াড়া প্রভৃতি গ্রামে দেবীপূজা হয়। আশ্বিন-সংক্রান্তি থেকে কার্তিক-সংক্রান্তি পর্যন্ত মন্দিরে প্রত্যেক ব্রতী চোদ্দটি মাড়ংলীতে সন্ধ্যাবেলায় চোদ্দটি প্রদীপ দিয়ে দেবতার উদ্দেশে বাতি দেখায়। একে বলা হয় দেবীপূজা। অবশ্য দেওয়ালীর দিনেই কেবলমাত্র চোদ্দটি মাড়ংলী ভোরবেলায় দিয়ে যান মালিয়াড় গ্রামের ব্রতীরা; আর প্রতিদিন অন্তত একটি করে।

মালিয়াড় গ্রামে দেওয়ালীতেই দেবীপূজা শেষ হয়ে যায়। কিন্ত শালতোড়া গ্রামের বাসিন্দারা কার্তিক-সংক্রান্তি পর্যন্ত দেবীপূজা করেন। সন্ধ্যাবেলায় প্রদীপ জেলে দেওয়ার পরে তা থেকেই কাজল পেড়ে নেন ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে পরানোর জন্য । দেবীপূজায় কেবলমাত্র মেয়েরাই অংশ গ্রহণ করতে পারেন। মনে হয়, এই দেবী হচ্ছেন লক্ষ্মী। কারণ মেয়েরা যখন কাজল পাড়তে থাকেন কাজললতায় তখন তারা বলতে থাকেন-

"এবগণ দেবগণ তিন তুলসী নারায়ণ
নারায়ণের জলটুকু পড়ল সাগরে ;
সাগর তো শুকিয়ে গেল পশ্চিম নগরে ।
পশ্চিম পশ্চিম একাদশ
ধনে পুতে বাড়ে দশ
বাবা সন্ন্যাসীর চরণে ।
আজ ভৈরব থাকবে কাল তুলসীর বনে
কাল তোমাকে নিয়ে যাবো ছোট মাডুলী দিয়ে।
ছোট মাড়ুলী বড় মাড়ুলী, মাড়ুলী তলায় ঘর,
এক পাতা তুলসী দিয়ে তিষ্ট বরাবর ।
সাঁঝ দিলাম সলতে দিলাম স্বর্গে দিলাম বাতি
সব ঠাকুরের সন্ধ্যা নাও মা লক্ষী সরস্বতী ।"



আর এই সবই হলো বাংলার ঋতু অনুশাসনে খাবার পদ্ধতি, যেমন ——

"আশ্বিনেতে কচিশশা কার্তিকেতে ওল,
অগ্রহায়ণে শালি ধান্য ইচা মাছের ঝোল।"
পূর্ববঙ্গে চিংড়ি মাছকে 'ইচা' বলে। ইচিলা-ও বলে।



References:

Genus-PANICUM Linn. 654. P. milfaceum Linn. (চীনা )

জন্মস্থান—ত্রিহট্ট ও বেহার প্রদেশে চাষ হয়।

বিভিন্ন নাম- বা. সং- চীনা তা. বারাঙ্গু ; তে. বোরগ্লো ।।

ব্যবহার্য্য অংশ - শস্য

বর্ণনা—বর্ষজীবী উদ্ভিদ, কাণ্ড শক্ত, ২-৪ ফুট উচ্চ, গাছের গোড়া অঙ্গুলিবৎ মোটা,

পত্র -১২ ইঞ্চি লম্বা, ২-১ ইঞ্চি চওড়া, সূক্ষ্ম লোমযুক্ত। শীষ ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা, শাখা সবুজবর্ণ ও খাড়া। পুষ্পগুচ্ছ ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা। পুংকেশর ৩টা, গর্ভও খুব ছোট । ফল প্রায় গোলাকৃতি, সাহা। চীনার গাছ কাউন অপেক্ষা ছোট। ইহার দানা কাউনের দানা অপেক্ষা মোটা, স্বাদে সামান্ন তিক্ত। বর্ষাকালে ফুল ও শীতকালে ফল হয়।

ঔষধার্থে ব্যবহার—ইহা ঘোটকের পক্ষে পুষ্টিকর স্বায় ( ভাবপ্রকাশ )। চীনার তণ্ডুল খাইলে রক্তপিত্ত রোগের উপশম হয়।

শ্যামাকশ্চ প্রিয়ঙ্গুশ্চ ভোজনম্ রক্তপিত্তনাম্। (চক্রদত্ত)।

শূলরোগে কাউনের পায়েস চিনি সহ খাইলে শূল আরাম হয়। (Fig. 654 )



655. P. frumentaceum Roxb. (শ্যামা )

জন্মস্থান—উত্তর ও পশ্চিম বঙ্গে চাষ হয়।

বিভিন্ন নাম - বা. শ্যামা তে. সালু।

ব্যবহার্য্য অংশ - শস্য

বর্ণনা — শক্ত ও সোজা তৃণবিশেষ, কাণ্ড ১-৩ ফুট উচ্চ। পাতা ৬-১৪ ইঞ্চি লম্বা ও ৮-১ ইঞ্চি চওড়া, কদাচিৎ লোমযুক্ত। পুষ্পদণ্ড লম্বা, মোটা, ৪-৮ ইঞ্চি, অবনত। শীষের বোটা ক্ষুদ্র, উপরের শীষের প্রশাখাগুলি ক্ষুদ্র। পুষ্পগুচ্ছ ৪-১০ ইঞ্চি লম্বা, শুয়া শুরু (unawned), পুংকেশর ৩টা। ফল ক্ষুদ্র, প্রায় ডিম্বাকৃতি, সাদা

ঔষধার্থে ব্যবহার—ইহা পুষ্টিকর খাদ্য, দরিদ্রলোকে খাইয়া থাকে। (Fig. 655)



656. S. italica Beauv Panicum Italicum. (কঙ্গু ) কাউন

জন্মস্থান-কোচবেহার ও উত্তর বঙ্গে কাঐনের প্রচুর চাষ হয়।

বিভিন্ন নাম—ব', কাউন, কঙ্গু, কঙ্গুনি, কাকনিদানা; সং কঙ্গু; তা তেল্লাই। তে, করালু।

ব্যবহার্য্য অংশ—মূল ও দানা। মাত্রা, মূল ১/২-১ তোলা ।

বর্ণনা।—বর্ষজীবি তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। কাণ্ড ২-৪ ফুট উচ্চ, সাধারণতঃ শাখাপ্রশাখাযুক্ত। পত্র লম্বা ও কোমল, অগ্রভাগ খুব সরু, ৬-১৮ ইঞ্চি লম্বা ও ২-র ইঞ্চি চওড়া পুষ্পগুচ্ছ ৩-৫ ইঞ্চি লম্বা; বহু লোমযুক্ত এবং দেখিতে চোঙ্গার ন্যায় । পুংকেশর ৩টী। বীজ ডিম্বাক্বতি।

ইহা ভারতের বহুস্থানে ভুরা বা কাউন/কাওন খাদ্য রূপে ব্যবহার হয়। বর্ষাকালে ফুল ও শীতকালে ফল হয়।

ঔষধার্থে ব্যবহার--ইহার দানা দুগ্ধের সহিত মিশ্রিত করিয়া খাইলে একটা লঘুপাক খাদ্য বলিয়া ব্যবহৃত হইতে পারে। রক্তপিত্তগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষে কঙ্গু তৈল বিশেষ হিতকর। বন্ধু তণ্ডুল অশ্বের পক্ষে অতি বলকর ( ভাবপ্রকাশ )। চিনিযোগে কঙ্গুর পায়স অতি পুষ্টিকর। (Fig. 656)

৬১১ SAUCHARUM.J ভারতীয় বনৌষধি 657. 8. officinarum Linn.



সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে রবিশস্যের মধ্যে মাসকলাই, মুগ, ছোলা, অড়হর মুসুরি, বরবটী, মটর, মাড়য়া, ভুরা, যব ও খেসারির উল্লেখ পাওয়া যায়। গঙ্গারামের 'মহারাষ্ট্রপুরাণে' এবং ভারতচন্দ্রের 'অন্নদামঙ্গলে' এযুগের খাদ্যশস্য ও রবিশস্যের পূর্ণাংগ বিবরণ আছে। ভারতচন্দ্র 'অন্নদামঙ্গলে' 'দিল্লীতে উৎপাত' বর্ণনাকালে এ যুগের বাংলার সমস্তরকম উৎপন্ন শস্যের পরিচয় দিয়ে গেছেন :

"ধান চাল মাষ মুগ ছোলা অরহর

মসুরাদি বরবটী বাটুলা মটর ।।

দে ধান মাড়য়৷ কোদ৷ চিনা ভুরা খর ।

জনার প্রভৃতি গম আদি আর সব ॥ ১৩"

ref:

কোচবিহারের লোকসংস্কৃতি - ডঃ দিলীপকুমার দে

পৌন্ড্র দেশ ও জাতির ইতিহাস - শ্যামল কুমার প্রামানিক

রাঢ়ের সংস্কৃতি ও ধর্মঠাকুর : অমলেন্দু মিত্র

ফরিদপুরের ইতিহাস- ১ম খণ্ড আনন্দনাথ রায়

লোক সঙ্গীত বিভাকর খন্ড - সুবোধ গঙ্গোপাধ্যায়

লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ - দুলাল চৌধুরী, পল্লব সেনগুপ্ত

কুরমালি ভাষা ও সংস্কৃতি - কৃতি মাহাতো, বিশ্বনাথ মাহাতো



Reading lists
Bengali food stories
Get Kolkata News Today